যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ১০ প্রশ্ন

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা থেকে সম্প্রতি আমার সাথে যোগাযোগ করে ১০টা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যা নিয়ে তারা একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছিল এ মাসের শুরুর দিকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সেমিনারেও ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো ড. সৈয়দ মোরতোজা বাকের উত্তরগুলোর একাংশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমার মূল লেখাটা যা আমি প্রথম আলোকে দিয়েছিলাম তা আজ প্রথম বারের মত সম্পূর্ণ ভাবে এখানে প্রকাশ করছি।

১.  স্নাতকের জন্য কি যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়?

হ্যাঁ, স্নাতক পর্যায়ে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তে আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে পড়ালেখা এবং গবেষণায় বিশ্বমানে এরকম ২৪ টা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা রাসেল গ্রুপ বলে একটা গ্রুপ গঠন করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সাধারণত মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক করে সরাসরি স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন নামক একটা কোর্স রয়েছে যা শেষ করে তারপর স্নাতক পর্যায়ের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া যায়। তবে এ এবং ও লেভেল করা থাকলে সরাসরি রাসেল গ্রুপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া যায়। রাসেল গ্রুপের বাহিরে যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো রয়েছে, তাদের অনেকেই এখন মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাকে ভর্তির জন্যে বিবেচনা করছে। সে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ সাড়ে চার বা তার বেশি থাকলে ভর্তি হওয়া সম্ভব। আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ নেই। কিন্তু বছর দশেক ধরে পরীক্ষামূলক ভাবে একটা বিকল্প ব্যবস্থা তারা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা করেছে। যদি কেউ বাংলাদেশ থেকে স্নাতক পর্যায়ে দুই বছর শেষ করে তারপর যুক্তরাজ্যে ভর্তি হতে চায়, তাহলে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষে ভর্তির পরিবর্তে তাদের দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে। একই ভাবে বাংলাদেশ থেকে তিন বছর শেষ করে এসে যুক্তরাজ্যের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। 

২. যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়ার জন্য বৃত্তির সুযোগ কেমন আছে?

স্নাতক পর্যায়ে বৃত্তির সুযোগ খুবই সীমিত। ছোট ছোট তিন থেকে পাঁচ হাজার পাউন্ডের কিছু বৃত্তি রয়েছে যা গত বছর পর্যন্ত তুলনামূলক ভাবে সহজে পাওয়া যেত। বর্তমানে সেই বৃত্তিগুলোও বেশ প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। শতভাগ বৃত্তি স্নাতক পর্যায়ে নেই বললেই চলে। রাসেল গ্রুপের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের বৃত্তি দিয়ে থাকে। এ বৃত্তিগুলো মূলত বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে। 

স্নাকত্তর পর্যায়ে বৃত্তির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সরকারি ভাবে মাস্টার্স এবং পিএইচডির জন্যে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ এবং মাস্টার্সের জন্যে ব্রিটিশ চিভনিং স্কলারশিপ রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো, বিশেষ করে রাসেল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গুলো, মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে প্রচুর বৃত্তি দিয়ে থাকে। এছাড়াও প্রফেসাররা বিভিন্ন প্রকল্প থেকে যে গবেষণার অর্থ পেয়ে থাকেন, সেখান থেকেও নিয়মিত পিএইচডির জন্যে বৃত্তি দেয়া হয়। 

৩. সরকারি বৃত্তির জন্য কী কী যোগ্যতা লাগে?

প্রধান যে দুটো সরকারি বৃত্তি রয়েছে অর্থাৎ কমনওয়েলস এবং চিভনিং, দুয়ের জন্যেই স্নাতক পর্যায়ে ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি নেতৃত্বের যোগ্যতা দেখাতে পারাটা বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাকটিভিটিতে সাফল্য থাকাটা বেশ সাহায্য করে এ ধরণের বৃত্তি পেতে, বিশেষ করে ব্রিটিশ চিভনিং স্কলারশিপের ক্ষেত্রে। 

৪. আর কী কী বৃত্তি আছে?

ওভারসিজ স্টুডেন্ট স্কলারশিপ বলে একটা সরকারি বৃত্তি প্রচলিত ছিল বেশ অনেক বছর যা বছর দশেক আগে বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাসেল গ্রুপের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সেই একই ধরনের বৃত্তি তাদের নিজস্ব অর্থায়ানে চালু করে। অনেকে এই নামটাও ধরে রেখেছে, যেমন ইউসিএল, নিউকাসল অথবা ইয়র্ক। এ বৃত্তিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে স্কলারশিপ বলে আলাদা একটা বিভাগ থাকে, সেখানে পাওয়া যাবে। এছাড়া বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বৃত্তি দিয়ে থাকে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। এদের মাঝে এন্ড্রু কার্নেগি, যার নামে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়, তাঁর অনুদানে কার্নেগি-ক্যালেডোনিয়ান স্কলারশিপ দেয়া হয় স্কটল্যান্ডে। প্রতি বছর ১৫ জন পিএইচডি স্টুডেন্ট এই বৃত্তি পেয়ে থাকে। ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কও নিয়মিত বেশ কিছু পিএইচডি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। 

৫. আইএলটিএস স্কোর কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

অনেকে মনে করে আইএলটিএস এর স্কোর বৃত্তির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এটা ভুল ধারণা। ভর্তি হবার জন্যে আইএলটিএস একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যা পাশ করে নির্দিষ্ট স্কোর অর্জন করা লাগে, কিন্তু ভর্তি অথবা বৃত্তিতে সেটা ভূমিকা রাখে না। ভর্তি এবং অধিকাংশ বৃত্তির আবেদন আইএলটিএস এর স্কোর ছাড়াই করা যায়। সেক্ষেত্রে ভর্তির অফারটা আসে কন্ডিশনাল। অধিকাংশ বৃত্তির জন্যে আবেদনের ক্ষেত্রে এই কন্ডিশনাল অফারই যথেষ্ট। তবে এটাও ঠিক আইএলটিএস কে হালকা ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে সাতের ভেতরে স্কোর চায় এবং কোন স্কিল সেটে ছয় থেকে সাড়ে ছয়ের কমে (বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে) হলে ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। এ কারণে ভালো করে প্রস্তুতি সহ আইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে অন্তত সাড়ে সাত স্কোর তুলে রাখা ভালো।     

৬. যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার পরিবেশ ও জীবনযাত্রার মান ও ব্যয় কেমন?

সামগ্রিক ভাবে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার পরিবেশ যথেষ্ট ভালো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা নির্ভর করে। রাসেল গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অর্থায়নের দিক দিয়ে সচ্ছল হওয়াতে তারা ছাত্র প্রতি ব্যয় করার সামর্থ রাখে বেশি। কিন্তু মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন বেশ ভালো করছে এবং ক্ষেত্রে বিশেষে তারা রাসেল গ্রুপের বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও বেশি যত্নশীল হচ্ছে। যেমন, পাশ করার পরে ক্যারিয়ার সাপোর্টে ইদানিং মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের গ্রাজুয়েটদের বেশ ভালো সাহায্য করছে যা বছর দশেক আগেও একদম অনুপস্থিত ছিল। 

জীবনযাত্রার মান যুক্তরাজ্যে মোটামোটি সব জায়গায় একই রকম। তবে ব্যয়টা বেশি দক্ষিণে। যত উত্তররে যাওয়া যাবে, ব্যয় কমতে থাকে। লন্ডনের সাথে ম্যানচেস্টারে একই ধরনের বাড়ির ভাড়ার পার্থক্যটা চোখে পড়ার মত। অথচ সুযোগ সুবিধার কথা বললে পার্থক্য খুব বেশি নেই। লন্ডনে চাকরীর সুযোগ বেশি বটে, কিন্তু চাকরীর অবেদনকারীর সংখ্যাও অনেক বেশি। উত্তরের শহর যেমন ম্যানচেস্টার, লিডস, লিভারপুল অথবা শেফিল্ডে খরচ কম কিন্তু পে স্কেল মোটামোটি একই।

৭. কেউ বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে খরচ কেমন?

আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের জন্যে খরচটা বেশ বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় ভেতে টিউশন ফিসের পার্থক্যটা বেশ চোখে পড়ে। যেমন রাসেল গ্রুপের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর টিউশন ফিস ২৫ থেকে ৩৫ হাজার পাউন্ডের মত পড়ে। কিন্তু মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে একই বিষয়ে জন্যে ফিসটা ১৪ থেকে ১৮ হাজার পাউন্ডের মধ্যে নেমে চলে আসে। বৃত্তি না পেলে শুধু খরচের কথা বিবেচনা করে অনেক সময় ভালো ছাত্রছাত্রীদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের ক্ষেত্রে আপোষ করতে হয়। পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার খরচ তো রয়েছেই। সেই খাতেও মাসে আটশ থেকে হাজার পাউন্ড লেগে যেতে পারে একজন ছাত্র বা ছাত্রী কোন শহরে থাকছে এবং কীভাবে থাকছে তার উপর ভিত্তি করে।    

৮. ঘরে বসে কীভাবে ইংরেজি ভাষা শিখতে পারি?

ঘরে বসে ইংরেজি শেখা এখন যথেষ্টই সহজ হয়ে গিয়েছে। ইউটিউবে খুব ভালো কিছু চ্যানেল রয়েছে যারা গত বারো থেকে পনের বছর সুনামের সাথে ইংরেজি শেখাচ্ছে। এই চ্যানেল গুলোতে ইংরেজি শেখানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের টিউটরদের দাপট চোখে পড়ে। যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির একটা এডটেক প্লাটফর্ম রয়েছে যার নাম ফিউচার লার্ন। সেখানে কম খরচে কিন্তু বিভিন্ন অভিজ্ঞ শিক্ষকের কাছ থেকে ইংরেজি শেখার সুযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি অনেক সময় কিছু কিছু প্লাটফর্মে ওয়ান-টু-ওয়ান অথবা ছোট ছোট ব্যাচে ভার্চুয়াল ক্লাসের মাধ্যমে ইংরেজির লেসন দেয়া হয়। যারা শেখার সময় শিক্ষকের সাথে সরাসরি কথা বলতে চায়, তাদের জন্যে এই কোর্স গুলো বেশ ফলদায়ক হতে পারে। 

৯. পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ আছে কি?

যুক্তরাজ্যে একজন স্টুডেন্ট পড়ালেখার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পায়। সরাসরি ব্যাবসা অথবা ফ্রিল্যান্সিং করার উপরে বারন রয়েছে। সেটা সঙ্গত কারণেই। ব্যাবসা অথবা ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে যেহেতু কেউ এটা নিশ্চিত করতে পারে না যে কেউ ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করছে কিনা, তাই এ ধরনের কাজ করার অনুমতি নেই। তবে যে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে থেকে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা নিয়মের মাঝে সব ধরনের কাজই করা সম্ভব।

১০. যুক্তরাজ্যে পড়ালেখা করে সে দেশে চাকরির সুযোগ কেমন?

ব্রেক্সিটের পরে যুক্তরাজ্য এ বিষয়ে সচেতন হয়েছে যে যারা এদেশে পড়ালেখা করছে, তারা তাদের জন্যে জনসম্পদ হতে পারে। এ কারণে তারা ইতোমধ্যে চালু থাকা একটা পয়েন্ট বেইজড ব্যবস্থা, যাকে টিয়ার টু ভিসা বলা হতো, সেটাকে আরো ভালো ভাবে পরিবর্তন করে ‘স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসা’ নামে চালু করেছে বছরখানেক হলো। একই সাথে তারা গ্রাজুয়েট ভিসা বলে একটা ভিসা চালু করেছে যে ভিসায় স্নাতক অথবা মাস্টার্সের পরে দুই বছর অথবা পিএইচডির পরে তিন বছর কাজের অনুমতি পাবে। এই দুই অথবা তিন বছরের সুযোগ নেয়ার পরে অথবা ঐ সময়ই যদি কেউ চায় সে স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসায় চলে যেতে পারবে। এছাড়াও কোভিড পরবর্তী সময়ে হেলথ ওয়ার্কারদের কথা ভেবে আলাদা একটা কাজের স্কিম চালু করেছে। অনেক ডাক্তার এবং পাবলিক হেল্থ নিয়ে পড়ালেখা করা স্টুডেন্ট এই ভিসায় চাকরীর সুযোগ পাচ্ছে। স্কিল্ড ওয়ার্কার অথবা হেল্থ এন্ড কেয়ার ওয়ার্কার ভিসা, এই দুই স্কিমেই পাঁচ বছর থাকার পর পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি এবং আরো এক বছর থাকার পর নাগরিত্ব দেয়া হয়।

যারা ইউকেতে উচ্চশিক্ষার জন্যে আবেদন করতে চাচ্ছেন, তারা BSA-UK/IRL গ্রুপ এবং UK Higher Education এর মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে জয়েন করতে পারেন। যারা এ প্রোগ্রাম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে অথবা যোগ দিতে চান, তারা মেন্টরশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এই লিঙ্কে পাবেন। উল্লেখ্য প্রোগ্রামটা ইংল্যান্ড থেকে প্রতিষ্ঠিত London School of Leadership, Investment, and Technology এর তত্বাবধানে পরিচালিত একটা এ্যাডমিশন, মেন্টরিং এবং গ্রুমিং প্রোগ্রাম। এখানে এ্যাডমিশন, ক্যাস এ্যাপ্লিকেশন, ভিসা প্রসেসিং সহ বিভিন্ন সার্ভিস গ্রুপের সদস্যদের জন্যে ফ্রিতে দেয়া হচ্ছে।

পোস্টটি মোট পড়া হয়েছে 1741 বার।

error: Content is protected !!