আপনি যখন এই আর্টিকেলটা পড়ছেন তখন সম্ভবত আপনার ভিসা হয়ে গিয়েছে এবং আপনি ইউকে আসার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আপনি এটা ভেবে চিন্তিত যে কী কী ডকুমেন্ট সাথে রাখতে হবে এবং কীভাবে সেগুলো নেবেন। ইমিগ্রেশনে আপনাকে কী ধরনের প্রশ্ন করতে পারে, সেটা ভেবেও আপনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
শুরুতেই জানিয়ে রাখছি অহেতুক দুশ্চিন্তা করে বিদায় বেলায় পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটানোটা নষ্ট করবেন না। আপনি লম্বা সময়ের জন্যে ইউকে আসতে যাচ্ছেন। অন্তত আগামী একটা বছর পরিবার থেকে দূরে থাকবেন, এতটুকু নিশ্চিত। তাই যতটুকু পারা যায় সুন্দর সময় কাটান পরিবারের কাছের মানুষদের সাথে।
ইমিগ্রেশনে আপনাকে তেমন কোন কঠিন প্রশ্ন করবে না। একান্ত কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ইমিগ্রেশন অফিসার হেসেই কথা বলবে আপনার সাথে এবং তেমন জটিল প্রশ্নও করবে না। এক্ষেত্রে যে কাজটা আপনাকে করতে হবে তা হলো ভালো ভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। আমাদের BSA-UK/IRL গ্রুপে যত গুলো ঘটনায় সদস্যরা ইমিগ্রেশনে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সব গুলতেই তারা নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন।
আমার পরিচিত একজন যিনি একটা কনসালটেন্সিতে কর্মরত রয়েছেন জানিয়েছেন তাদের একজন ছাত্রকে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত পাঠিয়েছে UKVI। আমি সময় নিয়ে জানার চেষ্টা করেছিলাম কী ঘটেছিল সেই স্টুডেন্টের সাথে। মূলত সে খুবই দুর্বল ছিল ইংরেজিতে। তার উপর নার্ভাস হওয়াতে কথাই বলতে পারছিল না। তারপর ইমিগ্রেশন অফিসার খোঁজ নিয়ে দেখে সে OIETC দিয়ে এসেছে। এরপর এয়ারপোর্টে তার আবার ইংলিশ টেস্ট হয়। স্বাভাবিক ভাবেই ঐ রকম সময়ে তার ভালো করার কথা নয় এবং তিনি পারেনও নি। ফলে তাকে ইউকেতে ঢুকতে দেয়া হয় নি এবং রিটার্ন টিকেট কেটে বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য করেছে।
উপরের উদাহরণটা আপনাকে ভয় দেখানোর জন্যে বলছি না। এরকম ঘটনা আমার জানা একমাত্র ঘটনা। কিন্তু তবুও শেয়ার করলাম কারণ এমনটাও ঘটতে পারে। এজন্যে আত্মবিশ্বাসের সাথে ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখোমুখি হওয়া জরুরী। আপনি আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করেই এদেশে এসেছেন। তাই আপনার ভয় পাবার কোন কারণ নেই। বরং ভয় পেলেই সকল সমস্যার সূচনা হয়।
আরেকটা ঘটনা আমাদের গ্রুপের একজন সদস্য শেয়ার করেছিলেন। তার কাছে ইমিগ্রশন অফিসার কিছু ডকুমেন্ট দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু নার্ভাস থাকার কারণে তার ব্যাগ থেকে ফাইলটা পড়ে যায় এবং আরো অনেক অতিরিক্ত ডকুমেন্ট সেখানে বের হয়ে আসে। ইমিগ্রেশন অফিসার তখন তাকে বলে সব ডকুমেন্ট যেন দেখায়। আর এতেই হয়েছিল তার সমস্যার সূচনা। তবে শেষ পর্যন্ত লম্বা সময় তাকে প্রশ্ন করা হলেও, কোন রকম সমস্যা ছাড়াই তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন।
আরেকটা কারণে আপনারা অনেক সময় ভয়ে ভয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখোমুখি হন। সেটা হচ্ছে ইউনিভার্সিটি যে শহরে তার থেকে অনেক দূরের শহর দিয়ে ঢোকার সময় আপনারা ধরে নেন যে ইমিগ্রেশন অফিসার বিষয়টাকে ভালো ভাবে দেখবে না। এটা খুবই ভুল একটা ধারণা। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় বলবো, আমি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলাম ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরের হিথ্রো এয়ারপোর্ট দিয়ে এসে। এ বিষয়ে আমাকে ইমিগ্রেশন অফিসার কোন প্রশ্নই করে নি। গ্রুপে দুয়েক জন জানিয়েছেন এরকম ঘটনায় তাদের প্রশ্ন করেছিল এবং তারা যখন বলেছিল তারা কীভাবে তাদের ইউনিভার্সিটির শহরে যাবে, অর্থাৎ বাস অথবা ট্রেনের কথা— তখন আর কথা বাড়ায় নি ইমিগ্রেশন অফিসার।
অতএব, উপরের আলোচনা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে এবং নিয়ম যা বলে তা অনুসরণ করে আমি পরামর্শ দেই দু্ইটা ফাইল তৈরি করার।
প্রথম ফাইলে থাকবে:
- পাসপোর্ট
- টিবি টেস্টের রিপোর্ট
- অফার লেটার
- ফুল স্কলারশিপ পাওয়া স্টুডেন্ট হলে স্কলারশিপের কনফার্মেশন লেটার অথবা ইমেইলের কপি
- ক্যাসের একটা কপি
- পাসপোর্ট কালেকশনের সময় সাথে দেয়া লেটার (যদি লেটার মিসিং থাকে, চিন্তিত হবার কিছু নেই। ইমিগ্রেশন অফিসারকে জানালেই হবে যে লেটারটা পাসপোর্টের সাথে ছিল না)
- সরকারী চাকরী করলে অনাপত্তি পত্র এবং জিওর কপি
- এয়ারপোর্ট দূরের শহরে হলে এবং সাথে সেখানে যাবার বাস অথবা ট্রেনের টিকেট থাকলে সেটাও এখানে রাখতে পারেন।
দ্বিতীয় ফাইলে রাখবেন:
- সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট
- IELTS অথবা অন্য যে ইংলিশ টেস্ট নিয়েছেন সেটার ট্রান্সক্রিপ্ট
- ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টের একটা কপি সাথে রাখা ভালো (আপডেটেড কপি লাগবে না। যেটা জমা দিয়েছিলেন, ঐটা হলেই হবে)
- যারা দেরীতে আসছেন, তারা ইউনিভার্সিটির সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল, বিশেষ করে এনরোলমেন্ট সংক্রান্ত ইমেইলের কনভার্সেশন প্রিন্ট করে এই ফাইলে রাখবেন। এমনিতে হয়তো কখনও এই ইমেইলগুলো দেখাতে হবে না, কিন্তু খুব ব্যাতিক্রম ঘটনায় যদি পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ে, তখন এই ইমেইলগুলোই আপনার জন্যে ইনসুরেন্স পলিসি হিসেবে আবির্ভুত হবে।
- যদি কোন কারণে ভিসার আবেদনের সময়ে অতিরিক্ত ডকুমেন্ট চেয়ে থাকে, তাহলে সেই ইমেইল কনভার্সেশনও প্রিন্ট করে এখানে রাখবেন।
ডিপেন্ডেন্টের ক্ষেত্রে:
- ম্যারেজ সার্টিফিকেট (স্পাউসের জন্যে)
- বার্থ সার্টিফিকেট (বাচ্চাদের জন্যে)
- টিবি টেস্ট রিপোর্ট
- ডিপেন্ডেন্ট যদি মূল এ্যাপ্লিকেন্টের সাথে ট্রাভেল না করে পরে করে, সেক্ষেত্রে মূল এ্যাপ্লিকেন্টের অফার লেটার এবং ক্যাসের একটা কপি সাথে রাখা ভালো।
- যদি সম্ভব হয়, মূল এ্যাপ্লিকেন্টের BRP এর একটা কপিও সাথে রাখতে বলবো।
যখন ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে কথা বলবেন, তখন মূলত প্রথম ফাইলটা হাতে রাখবেন। তবে শুরুতে শুধু পাসপোর্টটা তাকে দেবেন। তারপর যদি সে অতিরিক্ত কোন ডকুমেন্ট দেখতে চায়, সেটা তখন প্রথম ফাইল থেকে বের করে দেবেন। ১০ জনের ভেতর ৮ জনই তেমন কোন সমস্যা ছাড়া আশা করি ইমিগ্রেশন অতিক্রম করে চলে আসতে পারবেন। কোন ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছেন, কী কোর্সে যাচ্ছেন— ইত্যাদি প্রশ্ন করতে পারে ইমিগ্রেশন অফিসার। একান্তই যদি দুর্ভাগ্যজনক হয় আপনার অভিজ্ঞতা, তখন ঐ দ্বিতীয় ফাইলটায় হাত দিতে হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রেও মনে রাখবেন নার্ভাস হওয়া চলবে না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে যদি কথা চালিয়ে যেতে পারেন, আশা করি আলোচনা একটু লম্বা হলেও আপনি সব কিছু ঠিকমত গুছিয়ে পনের মিনিটের মধ্যে অফিসারকে সব কিছু দেখিয়ে বের হয়ে আসতে পারবেন (কিউতে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বাদ দিয়ে বললাম)।
প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা বলে রাখি, অনেক ভুঁইফোড় এজেন্সি বাংলাদেশে প্রচার করে যে ব্যাঙ্ক বন্ধ করা যাবে না কারণ ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট একসেস করে টাকাটা ওখানে আছে কিনা সেটা দেখতে চাইবে। এটা শুধু ভুল কথাই নয়, ইমিগ্রেশন অফিসারের সেই ক্ষমতাও নেই। টাকাটা আপনাকে UKVI দুই কারণে দেখাতে বলেছে: ১) টিউশন ফিসের বাকি অংশ এবং থাকা-খাওয়ার খরচ হিসেবে। আপনি আসার সময় সেই টাকা তুলে সাথে করে নিয়ে আসবেন অথবা ইউকেতে পাঠাবেন, এটাই স্বাভাবিক। আপনি ঐ টাকা বাংলাদেশে রেখে আসবেন, এমনটা চিন্তা করাও অযৌক্তিক এবং UKVI সেটা কখনও আপনাকে বলে নি। কোথাও কোন নিয়মে সেটা লেখা নেই। নিয়মে স্পষ্ট বলা আছে ভিসা হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি টাকাটা তুলতে পারবেন না। অতএব, ভিসা হয়ে যাবার পরে টাকাটা আপনি তুলতে পারবেন, সেটাই স্বাভাবিক। গ্রুপের অনেক সদস্য জানিয়েছেন ভিসা হাতে পাবার সাথে সাথেই তারা টাকাটা তুলেছেন। এ বিষয়ে তাদের কোন সমস্যা হয় নি। এ প্রসঙ্গে আরো বিস্তারিত একটা পোস্ট ভবিষ্যতে লেখার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই লেখাটা মূলত আমি যার জন্যে লিখেছি তিনি আমাদের UK Higher Education এবং BSA-UK/IRL গ্রুপের মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইউকে এসেছেন। ফ্লাই করার আগে আগে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন কী কী ডকুমেন্ট সাথে রাখবেন সে বিষয়ে যেন সাজেশন দেই। আমি তখন এই লেখটা লিখে ফেলি। আমাদের সেই সদস্য ইউকে পৌঁছেই আমাকে ইমেইল করেছেন তার ইমিগ্রেশন ক্রস করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। আমার কাছে মনে হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা আপনাদের জন্যে এখানে তার ভাষাতেই হুবহু শেয়ার করলে আপনারা আরো আত্মবিশ্বাসি হবেন। তিনি লিখেছেন,
আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া আমি একটু আগে ইউকে পৌঁছেছি। কোন সমস্যা হয় নি। সারপ্রাইজিংলি বাংলাদেশ ইমিগ্রশন আমাকে কোন প্রশ্নই করে নি। জাস্ট পাসপোর্ট & টিকেট দিয়েছি তাছাড়া ওরা অন্য কোন ডকুমেন্ট চায় নি। তবে ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে কাস লেটার দেখতে চেয়েছিল & ২ টা প্রশ্ন করেছিল। কোন ইউনিভার্সিটি & কোন কোর্স এটা জানতে চেয়েছে। দ্যাটস ইট।
আপনাদের সকলের ইউকের ফ্লাইট নিরাপদ হোক এবং ইমিগ্রেশন ক্রসিং সমস্যামুক্ত হোক, সেই শুভ কামনা রইলো।
যারা মেন্টরশিপ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক অথবা যোগ দিতে চান, তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত এই লিঙ্কে দেখুন। উল্লেখ্য প্রোগ্রামটা ইংল্যান্ড থেকে প্রতিষ্ঠিত London School of Leadership, Investment, and Technology এর তত্বাবধানে পরিচালিত একটা এ্যাডমিশন, মেন্টরিং এবং গ্রুমিং প্রোগ্রাম। এখানে এ্যাডমিশন, ক্যাস এ্যাপ্লিকেশন, ভিসা প্রসেসিং সহ বিভিন্ন সার্ভিস গ্রুপের সদস্যদের জন্যে ফ্রিতে দেয়া হচ্ছে।
পোস্টটি মোট পড়া হয়েছে 9797 বার।
Really It’s so much helpful. Thanks Niaz vai.
Informative & helpful as well. Wish your best of luck vaiya.
Very informative and helpful