স্টাডিগ্রুপ এবং পাথওয়ে প্রোভাইডার বিতর্ক

স্টাডিগ্রুপ নিয়ে সম্প্রতি আমাদের গ্রুপের সদস্যদের মাঝে প্রচুর জিজ্ঞাসা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই পোস্টগুলোতে প্রচুর তথ্য শেয়ার করেছেন। কিছু তথ্য দারুণ উপকারী ছিল, আবার কিছু তথ্য বিভ্রান্তিমূলক। এ কারণে আমি মনে করছি এ বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত গ্রুপের সদস্যদের সাথে শেয়ার করা জরুরী। এই পোস্টটার অবতারণাও সে কারণে। 

স্টাডিগ্রুপ আসলে কী? উত্তরটা সহজ— স্টাডিগ্রুপ একটা ‘পাথওয়ে প্রোভাইডার’। স্টাডিগ্রুপের মত আরো রয়েছে কাপ্লান, ইনটু, নাভিটাস, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাম্ব্রিজ এডুকেশন গ্রুপ, কিউএ হায়ার এডুকেশন ইত্যাদি। UK তে যারা দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্যে আসে তাদের একাংশ সরাসরি আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তি হতে পারে না। বাংলাদেশের HSC কে যথেষ্ট মনে করে না UK এর প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে রাসেল গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। রাসেল গ্রুপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি আরো প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা ফাউন্ডেশন কোর্সের মাধ্যমে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ দেয় ছাত্রছাত্রীদের। মার্স্টার্সের ক্ষেত্রেও চালু করেছে প্রি-মাস্টার্সের কনসেপ্ট। 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তর্কে যাবো না। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়— দুজায়গাতেই খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। গ্লাসগোতে টিউটোরিং-এর পাশাপাশি জাভা প্রোগ্রামিং-এর লেকচারার ছিলাম, আর ডাবলিনে টিউটোর হলেও একাধিকবার প্রফেসারের অনুপস্থিতিতে লেকচার নেয়ার সুযোগ হয়েছে। দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ই যথাক্রমে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে সুযোগ করে নিতে হলে HSC এর জ্ঞানের তুলনায় আরো পরিণত হওয়াটা জরুরী। কিম্বা অনেকের ফলাফল ভালো না থাকার কারণে মাস্টার্সে সুযোগ পায় না। তারা আসে প্রি-মাস্টার্সের পথ ধরে (পাথওয়ে প্রোভাইডার কথাটার আক্ষরিক অর্থই হচ্ছে ‘যারা পথ তৈরি করে দেয়’)। যাইহোক, অনেকের জন্যেই এই ফাউন্ডেশন অথবা প্রি-মাস্টার্স জরুরী। তা না হলে প্রথম থেকেই পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। 

এই অতিরিক্ত কোর্সগুলোর জন্যে মূলত পাথওয়ে প্রোভাইডারদের দরকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। রাসেল গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম অথবা প্রি-মাস্টার্স চালানোর যে ঝামেলা, সেটায় যেতে চায় না। তারা এই দায়িত্ব পাথওয়ে প্রোভাইডারদের উপরেই ছেড়ে দিতে পছন্দ করে। তবে মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু কিছু এখন নিজেরাই ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম চালু করেছে।

এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করে নেয়া ভালো যে সকল পাথওয়ে প্রোভাইডারই আসলে কলেজ। যতই চটকদার নাম থাকুক না কেন, দিন শেষে তারা সবাই বেসরকারী কলেজ। এদের কোনটাই ‘পাবলিক কলেজ’ না এবং এদের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে মুনাফা অর্জনের জন্যে। এতে ক্ষতির কিছু নেই। একটা সার্ভিস নিলে সেটার জন্যে আপনাকে খরচ দিতে হবে— এটাই স্বাভাবিক। এরা না থাকলে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের UK এর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তির সুযোগ অনেক সীমিত হয়ে যেতো, বিশেষ করে আন্ডারগ্র্যাড পর্যায়ে। শুধু SSC/HSC তে ভালো ফলাফল করা ছাত্রছাত্রীরাই তখন সুযোগ পেতো, একটু খারাপ করে ফেলেছে এরকম ছাত্রছাত্রীদের জন্যে এখানে ভবিষ্যত থাকতো না। সেদিক থেকে পাথওয়ে প্রোভাইডারদের দরকার রয়েছে। 

এবার আমি পাথওয়ে প্রোভাইডারদের মাধ্যমে যাবার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো তুলে ধরছি। 

যেহেতু আলোচনা শুরু করেছি স্টাডিগ্রুপকে দিয়ে, তাই তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করছি শুরুতে। তবে মাঝে মাঝে অন্য পাথওয়ে প্রোভাইডারদের কথাও তুলে ধরবো। স্টাডিগ্রুপ UK এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যে অন্যতম বড় পাথওয়ে প্রোভাইডার। রাসেল গ্রুপের কার্ডিফ, লিডস, ডারহাম এবং শেফিল্ড তাদের মাধ্যমে ফাউন্ডেশন এবং প্রি-মাস্টার্স করিয়ে থাকে। পাশাপাশি হাডার্সফিল্ড, কিংসস্টোন, লিঙ্কন, রয়াল হলওয়ে, কভেন্ট্রি, স্ট্রাথক্লাইড, সারে, সাসেক্স, এ্যাবার্ডিন, লিডস ব্যাকেট, জন মুরস এবং ল্যাঙ্কেস্টারও স্টাডিগ্রুপকে পাথওয়ে প্রোভাইডার হিসেবে ব্যবহার করে।  

উপরে উল্লেখকৃত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই সরাসরি আন্ডারগ্র্যাড পর্যায়ে ভর্তির সুযোগ দিবে না যদি না এ লেভেল করা থাকে। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোর ছাত্রছাত্রীরা পাথওয়ে প্রোভাইডারদের মাধ্যমেই ভর্তি হতে হয়। কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন আপনারা অনেকেই জানেন BSA-UK/IRL গ্রুপ থেকে আমরা একটা মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালাই। সেখানে এবার আমি একজন ছাত্রীর মেন্টর ছিলাম। তার হয়ে আমি চেস্টার এবং শেফিল্ড হ্যালাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাউন্ডেশনের জন্যে আবেদন করি। এক্ষেত্রে কোন পাথওয়ে প্রোভাইডার ছিল না। সরাসরি আবেদন করেছি। অফারও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি এসেছে। ওয়েস্টমিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়েও নিজেদের একটা ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম রয়েছে কিন্তু তারা পাশাপাশি পাথওয়ে প্রোভাইডারের মাধ্যমেও ভর্তি করে থাকে (এ প্রসঙ্গ পরে আবার ফিরে আসবো)। 

পাথওয়ে প্রোভাইডারের মাধ্যমে গেলে একটা বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যেহেতু তারা ফাউন্ডেশন অথবা প্রি-মাস্টার্স অফার করে, ছাত্রছাত্রীরা পরে নিজেদের মত বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করার একটা সুযোগ পায়। যেমন, কারো মূল কোর্স কিংস্টোনে, কিন্তু ফাউন্ডেশনের পরে ভালো ফলাফল করায় সে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করে চলে গেলো লিডস অথবা শেফিল্ডে। সব সময় সবাই যদিও এ সুযোগ পায় না, তবে কিছু কিছু পাথওয়ে প্রোভাইডার এ বিষয়ে সাহায্য করে থাকে অথবা অন্তত আপত্তি করে না। স্টাডিগ্রুপ তাদের মধ্যে অন্যতম। আমাদের BSA-UK/IRL গ্রুপ থেকে আমরা প্রায় ২০ জন ছাত্রছাত্রীকে ফাউন্ডেশনের পরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করে দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তাদের অধিকাংশই ছিল স্টাডিগ্রুপের মাধ্যমে কিংস্টোন সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রী। যদিও আমাদের সে উদ্যোগ সফল হয় নি তবে তা ছাত্রছাত্রীদের জন্যে, পাথওয়ে প্রোভাইডারের কারণে নয়। 

পাথওয়ে প্রোভাইডারদের মাধ্যমে যাওয়ার আরেকটা বিশেষ সুবিধা হচ্ছে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কোরের ঘাটতি দূর করে নেয়া। যারা কোন ভাবেই ৬ অথবা সাড়ে ৬ তুলতে পারছে না, তারা ফাউন্ডেশন কোর্সের মাধ্যমে আন্ডারগ্র্যাডে ঢোকার একটা সুযোগ পায়। তাছাড়া আমি এমনটাও দেখেছি যে অনেকে HSC তে ভালো ফলাফল থাকার পরও ফাউন্ডেশনে যায় শুধু নিজেকে আরো ভালো ভাবে প্রস্তুত করতে। আমি মেন্টরিং করেছি এরকম একজন রীতিমত জোর করেই ফাউন্ডেশনে গিয়েছে যদিও তার সরাসরি আন্ডারগ্র্যাডে ভর্তির সুযোগ ছিল। 

পাথওয়ে প্রোভাইডাররা আরেকটা সুবিধা দিয়ে থাকে ছাত্রছাত্রীদের। এটাকে বলা হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার’। যেমন, কেউ বাংলাদেশে এক বছর পড়েছে। এখন সে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে চায়। যেহেতু UK ক্রেডিট সিস্টেমে চলে না, তাই সে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার ওয়ানে এসে ঢুকতে পারবে কোন পাথওয়ে প্রোভাইডারের মাধ্যমে। তারপর সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারে চলে যেতে পারবে পরের বছর। পাথওয়ে প্রোভাইডাররা এখানে একটা ব্রিজের ভূমিকা পালন করছে। 

এবার তুলে ধরছি অসুবিধার দিকগুলো। পাথওয়ে প্রোভাইডারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা বড় অংকের ডিপোজিট চার্জ করে। আমাদের মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম থেকে আমি দুজন ছাত্রীর জন্যে স্টাডিগ্রুপের মাধ্যমে ফাউন্ডেশন হয়ে হাডার্সফিল্ড এবং কিংসস্টোনে আন্ডারগ্র্যাডের জন্যে আবেদন করেছিলাম জানুয়ারিতে। স্টাডিগ্রুপ দুইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যেই সাড়ে সাত হাজার পাউন্ড করে ডিপোজিট দিতে বলে। শুধু তাই নয়, কেম্বিজ্র এ্যাডুকেশন গ্রুপ এবার বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্যে সম্পূর্ণ টিউশন ফিস ডিপোজিট হিসেবে চেয়েছে। এতে খারাপ প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চালানো ফাউন্ডেশন প্রোগ্রামে। আমার মেন্টরিং করা যে ছাত্রী শেফিল্ড হ্যালামে যাচ্ছে এবার, সে প্রথমে মাত্র ১ হাজার পাউন্ড ডিপোজিট দিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পরে তাকে আরো চার হাজার পাউন্ড পে করতে বলে। শেষ পর্যন্ত ক্যাস পেতে তাকে সেটা করতে হয়েছেও। 

পাথওয়ে প্রোভাইডারের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে টিউশন ফিস। কেউ কম চার্জ করে, কেউ বেশি, কেউ অনেক বেশি। অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল যে টিউশন ফিস চার্জ করে তা অকল্পনীয়। শেষ পর্যন্ত এ বছর তারা স্কলারশিপের মোড়কে সেটাকে ৪০% কমিয়ে এনেছিল। উপরে উল্লেখ করেছিলাম ওয়েস্টমিনিস্টার প্রসঙ্গে আবার কথা বলবো। এবার আবার সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি। ওয়েস্টমিনিস্টারে যে কোর্সের জন্যে আমি পাথওয়ে প্রোভাইডার কাপ্লানের মাধ্যমে ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্যে আবেদন করেছিলাম, তারা ২০ হাজার পাউন্ড ফিস চেয়েছিল অথচ মূল কোর্সের ফিস ছিল ১৪ হাজার পাউন্ড! শুধুমাত্র এই অতিরিক্ত ফিস চাওয়ার জন্যে সেই স্টুডেন্ট সেখানে যেতে পারে নি। প্রচুর অনুরোধের পরেও অংকটা তারা কমাতে চায় নি। 

পাথওয়ে প্রোভাইডারের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হচ্ছে দায়িত্ব এবং কান্ডজ্ঞান। যেহেতু এরা ‘ফর প্রফিট’ প্রতিষ্ঠান, তারা অন্ধের মত স্টুডেন্ট নিতে শুরু করে। মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এদের সাথে কাজ করে যেটা বুঝেছি, এরা শুরুতে সবাইকে কন্ডিশনাল অফার দেয়। স্টাডিগ্রুপ আমার একাধিক স্টুডেন্টকে তিন দিনে অফার দিয়েছিল। কিন্তু তারা মূল স্ক্রিনিংটা শুরু করে এর পরে (কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, কেউ কেউ শুরুতেই ক্রেডিবিলিটি ইন্টারভিউ নেয়, আমার এক স্টুডেন্টের সাথে এটা ঘটেছে— তবে এগুলো ব্যতিক্রম ঘটনা)। এই স্ক্রিনিং করতে করতে এমনটা প্রায়ই হয় যে ডিপোজিটের পরে আর ক্যাস দেয় না। যদি ক্যাসই দিতে না পারে, তাহলে ডিপোজিট কেন নিবে? এটা যৌক্তিক প্রশ্ন। নিয়মের ফাঁক গলে তারা কি ডিপোজিট নেয়া টাকাটা ইতোমধ্যে কোথাও ইনভেস্ট করে রাখছে? দেখার আপাতত কেউ নেই। এ বিষয়ে আরো রেগুলেশন আসা জরুরী। 

আরেকটা বিষয় এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু যে ছাত্রছাত্রীদের ফাউন্ডেশন অথবা প্রি-মাস্টার্সে নেয়া হবে, তারাই পরের বছর মূল আন্ডারগ্র্যাডে অথবা মাস্টার্সে যোগ দিবে। এক্ষেত্রে সিট সংখ্যা সীমিত। পাথওয়ে প্রোভাইডাররা অনেক ছাত্রছাত্রীকে এক সাথে অফার দিয়ে পরে সিট সংখ্যার কথা বলে অফার তুলে নেয়। সম্প্রতি আপনারা স্টাডি গ্রুপের সাথে এ বিষয়টা দেখেছেন। অন্য আরেকটা পাথওয়ে প্রোভাইডারও ঠিক একই কাজ এবার করেছে। কিন্তু তারা কিছুটা স্মার্ট ভাবে কাজটা করেছে। তারা আমাদের (মেন্টরদের) কাছ থেকে তিনজন করে ছাত্রছাত্রীর নাম নিয়েছে যাদের তারা আনকন্ডিশনাল অফার দেয়। অন্যদের অফার তুলে নেয়। 

স্টাডিগ্রুপ বিষয়টাকে একটু বেশি দূর নিয়ে গিয়েছে। তারা ডিপোজিট নিয়ে ফেলার পর এবং যখন ছাত্রছাত্রীরা ক্যাসের ইন্টারভির জন্যে অপেক্ষা করছে (অনেকেই তারিখও পেয়েছে), তখন অফার তুলে নিয়েছে। কারণ হিসেবে দেখিয়েছে ‘অতিরিক্ত আবেদন’। এটা যদি কারণই হয় তাহলে অফার দেয়ারই কথা না। যতটুকু স্থান রয়েছে ক্লাসে, তার চেয়ে বেশি অফার দেয়ার সুযোগই নেই। অথচ তারা কোর্স ফুল হয়ে যাবার পরও ঐ একই কোর্সে অফার দিয়ে গিয়েছে এবং খুব সম্ভবত যখন বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে, তখন তারা ভবিষ্যতে কী সমস্যা হতে পারে, সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে। আমার ধারণা যেহেতু ফাউন্ডেশন কোর্স তারা করাচ্ছে, সেক্ষেত্রে তারা যত খুশি ছাত্রছাত্রী নিতেই পারে। তারা সম্প্রতি প্রচুর লেকচারার নিচ্ছে তাদের ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্যে। এটাও নির্দেশ করে যে তারা হয়তো অতিরিক্ত ব্যাচ/ক্লাস চালু করবে। কিন্তু ফাউন্ডেশনের পর ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে এবং সেখানে আসন সংখ্যা সীমিত। এরকম কোন পরিস্থিতিতে খুব সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা চাপের পরিপ্রেক্ষিতে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে তারা বাধ্য হয়েছে। তবে কারণ যেটাই হোক, যে কাজটা স্টাডিগ্রুপ করেছে, তা ন্যাক্কারজনক একটা ঘটনা। এ বিষয়ে যদি কেউ অভিযোগ করতে চায়, সে ‘অফিস অভ দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ্যাডজুডিকেটর’ এর ওয়েব সাইটে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবে। 

সাইটের লিঙ্ক: https://www.oiahe.org.uk/ 

যাইহোক, উপরের আলোচনার পর স্বাভাবিক ভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগবে তাহলে কি পাথওয়ে প্রোভাইডারের মাধ্যমে আবেদন করা ঠিক না? উত্তরটা ‘হ্যা’ আবার ‘না’! যদি সম্ভব হয়, তাহলে ফাউন্ডেশনের জন্যে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করাই ভালো। কিন্তু মনে রাখা জরুরী, সে ক্ষেত্রে সংখ্যাটা অনেক কম। যাদের HSC/SSC এর ফলাফল খুবই ভালো, তারা হয় তো সরাসরি আন্ডারগ্র্যাডেই যেতে পারবে, কিন্তু যাদের সেই সুযোগ নেই, তাদের জন্যে পাথওয়ে প্রোভাইডার সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তখন খুঁজে দেখতে হবে কারা ভালো। পড়ালেখার মান, ফিস, বিশ্ববিদ্যালয়ের অপশন এবং সার্ভিসের মানের উপর নির্ভর করবে কোন পাথওয়ে প্রোভাইডারের মাধ্যমে যাওয়া উচিত এবং কার মাধ্যমে আবেদন করা উচিত হবে না। 

এ বিষয়ে সামনে আরো বিস্তারিত লেখার এবং আলোচনা করার ইচ্ছে রয়েছে। যারা সামনের বছর UK আসার জন্যে আবেদন করতে যাচ্ছেন, তারা অনুগ্রহ করে নিচের গুগল ফর্মটা পূরণ করে যোগাযোগে থাকুন। ইমেইলের মাধ্যমে পরবর্তী লেখা এবং ওয়েবিনার সম্পর্কে জানানো হবে পরে।

এখানে ক্লিক করে নাম এবং ইমেইল শেয়ার করুন। (নতুন ট্যাবে লিঙ্ক খুলবে)

পোস্টটি মোট পড়া হয়েছে 2418 বার।

error: Content is protected !!