দেরীর দুষ্টচক্র

প্রত্যেকটা ইনটেকের ঠিক আগে আগে আমাদের BSA-UK/IRL গ্রুপে প্রচুর দুশ্চিন্তা এবং হতাশাগ্রস্ত মানুষের পোস্ট আসে। এই পোস্টগুলোর বক্তব্য মূলত একই— অফার আসে নি এখনও, কিম্বা পেমেন্ট করেছি কিন্তু ডেফার করে দিয়েছে, অথবা ভিসার ডিসিশন আসছে না কিন্তু এদিকে লাস্ট এ্যারাইভেল ডেইট পার হয়ে যাচ্ছে

যারা গ্রুপে লম্বা সময় রয়েছেন, তারা বছরের পর বছর এই পোস্টগুলো দেখেছেন। গ্রুপটা আমরা প্রায় ১১ বছর ধরে চালাচ্ছি। ২০২০ এর শেষের দিক থেকে একটা মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালাচ্ছি আমরা এই গ্রুপ থেকে যার মাধ্যমে আপনাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আরো বেড়েছে (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)। এই পথ চলায় একটা দুষ্টচক্রের সাথে পরিচিত হয়েছি। আমি নাম দিয়েছি তাকে ‘দেরীর দুষ্টচক্র’!

প্রতি ইনটেকে স্টুডেন্টদের একটা বড় সংখ্যা একেবারে শেষ মুহূর্তে আবেদন করে। মেন্টরশিপে আমরা নিয়মিত দেখি এই চর্চা। যখন মোটামোটি সব ইউনিভার্সিটি এ্যাপ্লিকেশন নেয়া বন্ধ করে ফেলেছে, তখন তারা এসে অনুরোধ করে এ্যাপ্লাই করে দেয়ার জন্যে। অনেকে বলে এই ইনটেকে না যেতে পারলে জীবন শেষ! অথচ দেখবেন ঐ ইনটেকের এ্যাপ্লিকেশন ইউনিভার্সিটিগুলো অনেক আগে থেকে নিচ্ছে, কিন্তু তাদের খবরই ছিল না তখন।

এই শেষ মুহূর্তে এ্যাপ্লাই করলে তিনটা সমস্যা হয়—

১) অধিকাংশ সময়ই সিট ফিলাপ হয়ে যায়। ফলে ডেফার করে দেয় কিম্বা অফারই দেয় না আর।

২) অনেকে ডিসিশন নিতে পারে না ব্যাঙ্ক সলভেন্সি দেখানো শুরু করবে কিনা। যেহেতু একটা বড় অংশই লোন নিয়ে এই কাজটা করে, তারা লসের কথা ভেবে রিস্ক নেয় না। পরে দেরীতে অফার এলে আর সলভেন্সি দেখানোর কাজটা শুরু করতে পারে না এবং অবধারিত ভাবেই ক্যাসের জন্যে আবেদন করার ডেডলাইন মিস করে।

৩) সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে তিন নাম্বার ঘটনাটা। যারা দেরীতে অফার পাচ্ছে, তাদের ভিসার আবেদন করতে দেরী হয় এবং তার ফলাফল হিসেবে না না জটিলাতা শুরু হয় যার মধ্যে ক্যাস তুলে নেয়ার কারণে ভিসা রিফিউজ হওয়া থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটির নিষেধ অমান্য করে ইউকে এসে অবৈধ হয়ে ভবিষ্যত নষ্ট করা সবচেয়ে কমন কনসিকুয়েন্স।

অথচ এই তিনটা সমস্যা কিন্তু সহজে এড়িয়ে যেতে পারতো যদি শেষ মুহূর্তে এসে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ইনটেক না ধরে পরের ইনটেক নিয়ে চিন্তা করতো স্টুডেন্ট। মেন্টরশিপ থেকে আমি নিয়মিত এই সাজেশনটা দেই। শুরুতে কেউ শোনে না সেটা। যেমন, গত সেপ্টেম্বরে যারা একদম শেষের দিকে আবেদন করেছে তাদের কাউকে কাউকে জানুয়ারির কথা বলেছিলাম। তখন শোনে নি। সেপ্টেম্বর নিয়ে চাপাচাপি করতে গিয়ে এমন একটা অবস্থায় চলে এসেছে যে জানুয়ারির জন্যেও আবেদনের সময় প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত যখন জানুয়ারির জন্যে আবেদন করতে বলেছে, সেটা এতটা দেরী হয়েছে যে এখন আর অফার আসছে না।

তাদের অনেকে এখন কিছুটা বিচক্ষণ হয়ে এপ্রিলে আবেদন করতে বলেছেন। আমি মোটামোটি নিশ্চিত এরা এপ্রিলে আসতে পারবে। কিন্তু অন্য যারা এখনও জানুয়ারি নিয়ে চাপাচাপি করছে এবং এপ্রিলের কথা বলার পরও কানে তুলছে না, তারা আসলে এপ্রিলেও আসতে পারবে না।

এই যে দেরীর দুষ্টচক্র— এটা চলতেই থাকে। প্রথমে সেপ্টেম্বর, তারপর জানুয়ারি, তারপর এপ্রিল, তারপর আবার সেপ্টেম্বর— এভাবে তারা ঝুলে থাকে কয়েক বছর। এমনও সদস্যদের সাথে মেন্টরশিপের কল্যানে আমার পরিচয় হয়েছে যারা তিন বছর ধরে চেষ্টা করেই যাচ্ছে! আমি প্রথমে শুনে অবাক হতাম যে একটা মানুষ তিন বছর ধরে কেমন করে চেষ্টা করে? হাতে সময় নিয়ে সব কিছু গুছিয়ে বসে এ্যাপ্লাই করবে— অফার আসবে— কন্ডিশন ফুলফিল করবে— ক্যাসের জন্যে রিকোয়েস্ট করবে— ভিসার জন্যে আবেদন করবে। কাজগুলো খুব একটা জটিল নয়।

কিন্তু তারপরও সমস্যা হচ্ছে? কারণ ঐ দেরীর দুষ্টচক্র। যে কোন একটা ইনটেককে টার্গেট করে হাতে সময় নিয়ে শক্তিশালী এ্যাপ্লিকেশন ফেলে খুব কম স্টুডেন্ট। গ্রুপ থেকে তিন বছর আগে আমরা একটা জরিপ চালিয়ে ছিলাম। সেখানে আমরা জানার চেষ্টা করেছিলাম আপনাদের আবেদন করার ক্ষেত্রে ভয়টা কোথায় কাজ করে। সবচেয়ে বেশি মানুষ জবাব দিয়েছিলেন ‘আত্মবিশ্বাস’।

একজন অভিজ্ঞ কেউ তাকে দেখিয়ে দিচ্ছে কী করে স্টেটমেন্ট অভ পারপাস (পার্সোনাল স্টেটমেন্ট) লিখতে হয়, কী করে সিভিটা বানাতে হয়, কী করে রেকমেন্ডেশন লেটারগুলো সংগ্রহ করতে হয়, কী করে বিষয় এবং ইউনিভার্সিটি ঠিক করতে হয়— এগুলো তারা চায়। আমাদের মেন্টরশিপ প্রোগ্রামটা তারই পরিপ্রেক্ষিতে চালু হয়। গত দুই বছরে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে। কোন রকম সুবিশেষ প্রচারণা না করেই প্রচুর স্টুডেন্ট নিয়মিত আবেদন করে মেন্টরশিপে।

কিন্তু এই দেরীর দুষ্টচক্র সেখানেও হানা দেয়। জানুয়ারির জন্যে আবেদন করতে এখনও অনেকে আসছেন! আপনাদের অনুরোধ করবো— প্লিজ। একটু বোধবুদ্ধি ব্যবহার করুন। এখন যদি জানুয়ারির জন্যে এ্যাপ্লাই করেন, ব্যাঙ্কে ২৮ দিনের জন্যে টাকা কবে ম্যাচিউর করবেন? কবে ক্যাসের জন্যে এ্যাপ্লাই করবেন এবং কবে ভিসার এ্যাপ্লিকেশন ফেলবেন? টাইম লাইনটা অন্তত মাথায় রাখুন। তাহলেই আর একদম শুরুতে বলা তিনটা সমস্যার মুখোমুখি হবেন না।

যারা নিজেরা এ্যাপ্লাই করছেন, কিম্বা কোন এ্যাজেন্সির মাধ্যমে কিম্বা আমাদের UK Higher Education থেকে পরিচালিত মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এ্যাপ্লাই করতে চান, তারা এখনই এপ্রিলের জন্যে প্রস্তুতি নিন। মনে রাখবেন, এপ্রিল মানে শুধু এপ্রিল না। এপ্রিল, মে, জুন— এই তিন মাসে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির অফার করা কোর্সের কথা বলছি। এটা একটা ছোট ইনটেক। সিটও কম থাকে। অধিকাংশ ইউনিভার্সিটি এ সময় কোর্স অফারও করে না। তাই সীমিত অপশনের মধ্যে অফার পেতে আগে আগে এ্যাপ্লাই করার বিকল্প নেই।

আর যাই করেন, দেরীর দুষ্টচক্রে পড়ে জানুয়ারির মত এপ্রিলও মিস করবেন না!

যারা মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এপ্রিল/মে/জুনের কোর্স গুলোতে এ্যাপ্লাই করতে চান, তারা উপরে শেয়ার করা লিঙ্কে গেলে বিস্তারিত তথ্য পাবেন। একটা রেজিস্ট্রেশন ফর্ম আছে ঐ পোস্টের প্রথম কমেন্টে। সেটা ফিলাপ করুন। আমরা দ্রুত যোগাযোগ করবো।

UK Higher Education Support Whatsapp: +44 7375 5000 46

error: Content is protected !!