কোভিড-১৯ এর মহামারী ২০২২ সনে এসেও আমাদের অস্থির করে রেখেছে। নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না এই চলমান বিপর্যয়ের হাত থেকে। নিত্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসার সাথে সাথে বিভিন্ন দেশ জোরদার করছে তাদের দেশে প্রবেশের নিয়ম এবং প্রবেশ পরবর্তী করণীয়। অমিক্রনের আবির্ভাবের পর ইউকে সরকারও জোরদার করেছিল ট্র্যাভেলের নিয়মগুলো। তবে অমিক্রন ছড়ালেও এর ভয়াবহতা তেমন না থাকায় সেই নিয়মগুলো ধীরে ধীরে শিথিল করতে শুরু করেছে তারা।
গত মাসের শুরুতেই ইউকে সম্পূর্ণ ভ্যাকসিনেটেড যাত্রীদের জন্যে প্রথমে পিসিআর টেস্ট করে আসার নিয়ম এবং পরে সব ধরনের প্রি-এ্যারাইভেল টেস্ট তুলে দেয়। পাশাপাশি ইউকে আসার পর সম্পূর্ণ ভ্যাক্সিনেটেড ট্রাভেলারদের জন্যে কোয়ারিন্টিনের নিয়ম তুলে দিয়ে শুধু দ্বিতীয় দিনে ঘরে বসে ল্যাটারাল ফ্লো টেস্ট করার নিয়ম চালু করে। আমার আগের এই পোস্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম।
সর্বশেষ ইউকে ট্রাভেলারদের জন্যে আরো সহজ করে দিয়েছে নিয়মগুলো। এক্ষেত্রে যাত্রীরা দুইটা ক্যাটাগোরির একটায় পড়বে—
- সম্পূর্ণ ভ্যাক্সিনেটেড— যাদের ইউকে সরকার অনুমোদিত ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে দুই ডোজ ভ্যাক্সিন নেয়া আছে অন্তত ১৪ দিন আগে। যেদিন দ্বিতীয় ডোজ (সিঙ্গেল ডোজের ক্ষেত্রে একমাত্র ডোজ) নেয়া হয়েছে সেদিনকে বাদ দিয়ে পরের দিন থেকে প্রথম, দ্বিতীয় করে ১৪ দিন হিসেব করতে হবে।
- নিচের এই ভ্যাক্সিনগুলো ইউকে সরকার অনুমোদিত
Covaxin, Moderna, Janssen (single dose vaccine), Novavax (Nuvaxovid and Covovax), Oxford/AstraZeneca, Pfizer BioNTech, Sinopharm Beijing এবং Sinovac-CoronaVac। এছাড়া যদি কেউ AstraZeneca Covishield, AstraZeneca Vaxzevria এবং Moderna Takeda নিয়ে থাকে, তারাও সম্পূর্ণ ভ্যাক্সিনেটেড হিসেবে গণ্য হবে।
- নিচের এই ভ্যাক্সিনগুলো ইউকে সরকার অনুমোদিত
- সম্পূর্ণ ভ্যাক্সিনেটেড নয়— যাদের হয় দুই ডোজ ভ্যাক্সিন নেয়া নি এখনও, কিম্বা ১৪ দিন হয় নি শেষ ডোজ নেয়ার ক্ষেত্রে (সিঙ্গেল ডোজে একমাত্র ডোজ নেয়ার ক্ষেত্রে ১৪ দিন হয় নি) অথবা ইউকে সরকার অনুমোদিত ভ্যাক্সিন নেয়া হয় নি।
নিচে দুই গ্রুপের জন্যে নতুন নিয়মগুলো আলোচনা করা হলো।
সম্পূর্ণ ভ্যাক্সিনেটেড যাত্রীর জন্যে নিয়ম
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ভোর চারটার পরে যারা ইউকেতে ল্যান্ড করবে তাদের আর আসার আগে দ্বিতীয় দিনের জন্যে টেস্ট কিট বুকিং দিতে হবে না এবং টেস্ট করতেও হবে না। অর্থাৎ ঐ দিন থেকে ইউকে আসার আগে বা পরে কোন রকম টেস্ট করতে হবে না। আসার পর কোন রকম কোয়ারিন্টিনও করতে হবে না।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে জানিয়েছে তাদের যাত্রীদের জন্যে এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকেও এরকম কোন বাধ্যবাধকতা আর নেই। একমাত্র দুবাই ভিত্তিক এ্যামিরাটস এয়ারলাইন্স তাদের দেশে পিসিআর টেস্টের ফলাফল দেখিয়ে কানেক্টিং ফ্লাইটে তুলবে বলে নিয়মটা তাদের ওয়েব সাইটে রেখেছে। এ বিষয়ে যে কোন নতুন ঘোষণা এলে সেটা এই পোস্টে পরে সংযুক্ত করা হবে।
সংযুক্তি: এ্যামিরাটসও নিয়মটা তুলে দিয়েছে। এ্যামিরাটসে যারা ট্রাভেল করে ইউকে আসবে, তাদের আর পিসিআর টেস্ট করতে হবে না।
Transiting passengers are not required to present a COVID 19‑PCR test certificate unless it is mandated by their final destination. সূত্র
তবে প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম পূরণ এখনও করতে হবে। অর্থাৎ কিট বুকিং না করতে হলেও এই ফর্ম পূরণ করে তবেই যাত্রীকে ফ্লাইটে উঠতে হবে। সে কারণে ব্যস্ততার মাঝে যেন আবার এই কাজটা বাদ পড়ে না যায়, সে দিকে লক্ষ রাখা জরুরী। কীভাবে ফর্মটা পূরণ করতে হবে, সে বিষয়ে পোস্টের একদম শেষে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সম্পূর্ণ ভ্যাক্সিনেটেড নয় এমন যাত্রীর জন্যে নিয়ম
ইউকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার আগে থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই দিন আগে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে করা কোভিড টেস্টের নেগেটিভ সার্টিফিকেট সাথে রাখতে হবে।
ইউকে তে আসার পরে করার জন্যে কোভিড টেস্ট আগেই বুকিং দিয়ে আসতে হবে এবং নির্ধারিত টাকাও পে করতে হবে। এ জন্যে ইউকে সরকারের এই অফিশিয়াল লিঙ্কটার সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম পূরণ করে আসতে হবে।
তবে শুরু থেকে কোয়ারিন্টিন করতে হবে না। যদি পিসিআর টেস্টের ফলাফল পজেটিভ আসে, তবেই কেবল কোয়ারিন্টিন করতে হবে। এক্ষেত্রে যে দিন ইউকেতে আসা হয়েছে, সেদিনকে Day 0 ধরে ১০ দিন কোয়ারিন্টিন করতে হবে।
এবার নিচে প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম পূরণ করার নিয়মটা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম তথা পিএলএফ পূরণ করতে হবে ইউকে পৌঁছানোর সময় থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সময়ের মাঝে যে কোন সময়ে। এ বিষয়ে ইউকে সরকারের ওয়েব সাইটে নিয়মটা এভাবে বলা রয়েছে: You can submit the form any time in the 48 hours before you arrive in the UK. অর্থাৎ কেউ যদি ১১ তারিখ সকাল দশটায় ইউকে পৌঁছায় সে নয় তারিখ বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার পর থেকে যে কোন সময় ফর্মটা পূরণ করতে পারবে।
এই ফর্মটা পূরণ করতে কোন টাকা দেয়া লাগবে না। এই লিঙ্ক থেকে ফর্মটা একসেস করা যাবে। প্রত্যেক এ্যাডাল্ট তথা ১৮ বছরের উপরে যাদের বয়স তাদের আলাদা আলাদা করে ফর্মটা ফিলাপ করতে হবে। যাদের সাথে ১৮ বছরের কম বয়সী রয়েছে, তারা অভিভাবকের একজনের সাথে তাকে অথবা তাদের যুক্ত করে নিতে পারবেন।
ফর্মটা পূরণ করার আগে যিনি পূরণ করছেন তার কাছে নিচের তথ্যগুলো থাকতে হবে:
- ইমেইল এ্যাড্রেস এবং ইনবক্সে একসেস। এই এ্যাড্রেস ব্যবহার করে ফর্মে আবার ঢুকতে হবে QR কোড নামাতে। এ বিষয়ে ইউকে সরকার এভাবে তাদের সাইটে লিখেছে: you’ll need it [email] to be able to log back into your form and to receive your QR code.
- একটা ফোন নাম্বার। ইউকেতে তারা চাইলে যেন এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারে। ইউকে সরকার এ বিষয়ে লিখেছে: we should be able to contact you on this number in the UK
- পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য।
- যাত্রার বিস্তারিত তথ্য।
- ইউকে তে যেখানে থাকা হবে সে জায়গার ঠিকানা।
এ লেখাটা যদি আপনার উপকারে আসে অথবা আপনি মনে করেন অন্য কারো কাজে লাগবে, তাহলে আপনার ফেইসবুকে অথবা বন্ধুর সাথে সরাসরি শেয়ার করতে অনুরোধ রইলো।
ইউকে এবং আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার এবং স্যাটেল হওয়া বিষয়ে সামনে আরো বিস্তারিত লেখার এবং আলোচনা করার ইচ্ছে রয়েছে। যারা UK/Ireland আসার জন্যে আবেদন করতে যাচ্ছেন, তারা অনুগ্রহ করে নিচের গুগল ফর্মটা পূরণ করে যোগাযোগে থাকুন। ইমেইলের মাধ্যমে পরবর্তী লেখা এবং ওয়েবিনার সম্পর্কে জানানো হবে নিয়মিত (যারা ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছেন, তাদের আবার নতুন করে শেয়ার করার প্রয়োজন নেই)।
এখানে ক্লিক করে নাম এবং ইমেইল শেয়ার করুন। (নতুন ট্যাবে লিঙ্ক খুলবে)
পোস্টটি মোট পড়া হয়েছে 4633 বার।
Thanks a lot brother ❤
দুঃখিত ভাইয়া এখানে অফ টপিক এ কমেন্ট করার জন্য, কিন্তু আমার এই ইনফরমেশন টা দরকার,
আমার পাসপোর্ট এ আমার আম্মুর নাম Shahena Akhter Parul । কিন্তু আমার সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট এ আম্মুর নাম হচ্ছে শুধু Shahena Akhter.
এখন এক্ষেত্রে কি কোনো সমস্যা হবে??
জানালে উপকৃত হবো।