ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ ইউকে যাবার আগে এবং পরে কোভিড টেস্ট এবং PLF সম্পর্কিত বিস্তারিত

জানুয়ারি ইনটেকের ক্লাস ইউকের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন, ওয়েস্ট লন্ডন, লন্ডন মেট্রোপলিটন ইত্যাদি) জানুয়ারি ইনটেকের ক্লাস মূলত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু করে। অনেকেই ইতোমধ্যে ইউকে চলে এসেছেন, আবার অনেকে এখনও ভিসা পান নি। যারা এখনও ভিসা পান নি কিম্বা সম্প্রতি ভিসা পেয়েছেন কিন্তু এখনও ফ্লাই করেন নি, তাদের সুবিধার জন্যে কোভিড সংক্রান্ত নীতিমালা এবং টেস্ট নিয়ে এই পোস্টটা তৈরি করা হয়েছে। 

ফ্লাই করার আগের টেস্ট

জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন এখন থেকে ইউকেতে আসতে ফ্লাই করার আগে আর টেস্ট করতে হবে না। তাঁর এ ঘোষণা বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্যে ছিল একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ। শুধু আর্থিক ভাবেই নয়, এই টেস্ট অনেকের সম্পূর্ণ পরিকল্পনাও এলোমেলো করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। ফ্লাই করার ঠিক আগ মুহূর্তে পজেটিভ হয়ে অনেকেই ক্লাস মিস করেছেন, কারো কারো ইনটেক ছুটে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। 

যদি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আশার আলো হয়ে আসে, তবে এর সাথে কিছু হতাশার গল্পও জড়িত। যেহেতু অধিকাংশ সময় বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা টার্কিশ, এমিরাটস, ইতিহাদ, কাতার বা এ রকম মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক এয়ারলাইন্সে করে যাত্রা করে থাকেন, তাদের জন্যে বরিস জনসনের এই ঘোষণা তেমন কোন আশার আলো বয়ে আনতে পারে নি। বরং আগের মতই অধিকাংশ ট্রান্সিটের দেশই পিসিআর টেস্ট চাইছে। ফলে ছাত্রছাত্রী এবং তাদের ডিপেন্ডেন্টরা শুধু বাংলাদেশ বিমানে সরাসরি ইউকে এলেই কেবল নিশ্চিত ভাবে পিসিআর টেস্ট এড়িয়ে যেতে পারবেন। তা না হলে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানীর ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখে নিতে হবে টেস্ট করাতে হবে কি না। 

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যাচ্ছে যে এমিরাটসে অবশ্যই পিসিআর টেস্ট করাতে হবে এবং সেটা তাদের বলে দেয়া সেন্টার থেকে। সেই টেস্টের রিপোর্ট কিউআর কোড সহ প্রিন্ট করে নিয়ে যেতে বলেছে তারা। টেক্সট ম্যাসেজ আকারে আসা রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সহ বেশ কিছু দেশের জন্যে সেই রিপোর্ট কিউআর কোড স্ক্যান করে ভেরিফাই করা যায়, এমন হতে হবে। যারা অন্য এয়ারলাইন্সে করে ট্রাভেল করবেন, তাদের প্রতি পরামর্শ থাকে এ বিষয়ে ফোন দিয়ে ঐ এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশ অফিসে কথা বলে নেয়ার অথবা ওয়েব সাইটে খোঁজ নেবার।

আবারো বলছি, একমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সরাসরি ট্রাভেল করলে যাত্রার আগে কোন টেস্ট করাতে হবে না। অন্য কোন এয়ারলাইন্সে, যেখানে ট্রান্সিট রয়েছে, ট্রাভেল করলে করাতে হবে কি হবে না, সেটা ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।  

ইউকে আসার পরের টেস্ট

এবার আসা যাক ইউকে আসার পরের টেস্টের বিষয়ে আলোচনায়। এই টেস্টটাকে বলা হয় ডে টু (Day 2) টেস্ট। অর্থাৎ ইউকে আসার দ্বিতীয় দিনে এই টেস্টটা করতে হবে। দ্বিতীয় দিন কোনটা, এ বিষয়ে অনেকের মধ্যে কনফিউশন থাকে। কিন্তু তেমনটা থাকার কোন কারণই নেই। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে:

যাত্রী যেদিন ইউকেতে ল্যান্ড করবেন, সেদিনকে ধরবেন Day 0। 

এর পরের দিন Day 1, এবং তার পরের দিন Day 2। 

এই টেস্ট করার ক্ষেত্রেও পিসিআর টেস্টের বাধ্যবাদকতা তুলে দেয়া হয়েছে। শুধু ল্যাটারাল ফ্লো টেস্ট করালেই চলবে। এই টেস্টটা সহজে, বাড়িতে বসে নিজে নিজে করা যায়। পনের মিনিট থেকে আধ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফলও চলে আসে। বাংলাদেশে এই টেস্টটাকে এ্যান্টিজেন টেস্ট বলেও ডাকা হয়। 

টেস্টটা আগেই বুকিং দিয়ে যেতে হবে যাতে ইউকে আসার পরেই যিনি এলেন, তিনি কিটটা হাতে পান। এছাড়াও এই বুকিং-এর সাথে প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম তথা পিএলফ (PLF) এর একটা সম্পর্ক রয়েছে। সেটাও একটু পরেই ব্যাখ্যা করা হবে। 

টেস্টটা বিভিন্ন জায়গা থেকে বুকিং দেয়া সম্ভব। তবে RANDOX হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশ বড় কোম্পানী। আমি সাধারণত তাদের থেকেই বুকিং দিতে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এই লিঙ্কে ক্লিক করলে — লিঙ্ক (নতুন ট্যাবে খুলবে)  — নিচের ছবির মত পেইজটা দেখা যাবে। 

এখান থেকে DAY 2 LATERAL FLOW TEST-টা কিনে নিতে হবে (সর্ব বামে)। পিসিআরের তুলনায় দামে কম। সাড়ে ১৭ পাউন্ডে বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। আর ১৪ পাউন্ড দিয়ে কিনলে ক্লিক এন্ড কালেক্ট থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আমার পরামর্শ থাকবে বাড়িতে আনিয়ে নেয়ার। মাত্র সাড়ে তিন পাউন্ডের জন্যে কালেক্ট করতে যাওয়ার ঝামেলায় না যাওয়াই ভালো। 

টেস্টটা কেনার পর একটা রেফারেন্স নাম্বার দেবে। এই নাম্বারটা যত্ন করে নোট করে রাখুন কিম্বা ইমেইলটা রেখে দিন। এই রেফারেন্স নাম্বারটা পরে আমাদের দরকার হবে। 

এবার আসছি টেস্টের ফলাফল কীভাবে রিপোর্ট করবেন, সে বিষয়ে। যেহেতু ল্যাটারাল ফ্লো টেস্টে ফলাফল সাথে সাথেই কিটের মধ্যেই চলে আসে, তাই আলাদা করে কিছু পাঠাতে হবে না। শুধু ফলাফলটা এ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্ট করতে হবে। এজন্যে যিনি টেস্ট করছেন তার ফোনের ধরন অনুযায়ী সঠিক এ্যাপটা নিচের লিঙ্ক থেকে ডাওনলোড করে ইন্সটল করে নিতে হবে। 

আইফোন ব্যবহারকাকী

এ্যান্ডরয়েড ফোন ব্যবহারকারী  

এবার তিনটা ধাপে কী করে টেস্টটা শেষ করতে হবে। আমি ধাপগুলো সংক্ষেপে বলে যাচ্ছি, সাথে বিস্তারিত দেখার জন্যে ভিডিওর লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি:

এ্যাকাউন্ট তৈরি

এ্যাপে এ্যাকাউন্ট তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ কারণ এই এ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই যাত্রীকে মেলানো হবে টেস্টের সাথে। এর জন্যে পাসপোর্ট স্ক্যান করতে হবে এবং আরো কিছু তথ্য সংযুক্ত করতে হবে। নিচের ইউটিউব ভিডিওটা বিস্তারিত দেখাবে কী করে এ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। 

যারা পরিবার অথবা স্পাউস নিয়ে ইউকে আসছেন, তারা নিচের ভিডিওটা দেখে নেবেন। এখানে দেখানো হয়েছে পরিবারের একাধিক সদস্যকে কী করে যুক্ত করা যায় এ্যাপে। 

টেস্ট

এবার চলে আসছি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপে। যদিও এখানে এ্যাপের কোন ভূমিকা নেই। নিচের ভিডিওটা দেখিয়ে দেবে কী করে টেস্টটা করতে হবে। খুবই সাধারণ একটা টেস্ট। ভিডিওটা অন্তত দুইবার দেখার পরে টেস্টটা করার পরামর্শ থাকবে। আর টেস্টটা করার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নেবেন এবং চেষ্টা করবেন একটা টেবিলে বসে টেস্টটা করতে। 

রিপোর্ট করা

আবার ফিরে আসছি এ্যাপে। টেস্টের ফলাফল রিপোর্ট করতে টেস্টের ফলাফলের ছবি তুলতে হবে। টেস্টটা যে প্লাটফর্মের উপর করা হয়, সেখানে একটা কিউআর কোড রয়েছে। এই কোডটা গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এই কোড দিয়েই যিনি টেস্ট করেছেন তাকে টেস্টের সাথে যুক্ত করা হবে। নিচের ভিডিওতে দেখানো হয়েছে কী করে টেস্টটা করার পরে রিপোর্ট করতে হবে। 

প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম

প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম তথা পিএলএফ (PLF) একটা অনলাইন ফর্ম যা নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে এ্যাকসেস করা যাবে। 

ফর্মের লিঙ্ক

শুরুতেই একটা এ্যাকাউন্ট খুলতে বলবে। তারপর বিভিন্ন তথ্য যেমন নাম, ফোন নাম্বার, পাসপোর্টের তথ্য, ঠিকানা ইত্যাদি যুক্ত করার পাশাপাশি Day 2 এর যে টেস্টটা বুকিং দেয়া হয়েছে, সেটার রেফারেন্সও যুক্ত করতে বলবে। আর এখানেই মূলত যাত্রীকে এবং তার যাত্রার বিস্তারিত তথ্যের সাথে টেস্টটাকে যুক্ত করে নেয়া হয়। 

এক্ষেত্রে একটা সমস্যার মুখোমুখি অনেকেই হয়েছে। এই ফর্মটা এডিট করা যায় না। কোন কারণে যদি কারো যাত্রার তারিখ পিছিয়ে যায় কিম্বা কেউ কোভিড পজেটিভ হয়ে যায় এবং আর যাত্রা করতে না পারে, তখন পরে যাত্রা করার সময় এই ফর্মটা আর ব্যবহার করার উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে যাত্রীকে আরেকটা নতুন ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। সমস্যাটা আরো জটিল হয়ে উঠবে যখন যাত্রী দেখবে যে Day 2 টেস্ট কিটের রেফারেন্স আগের ফর্মে ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে! তবে চিন্তার কিছু নেই। এক্ষেত্রে আবার নতুন করে কিট কেনার প্রয়োজন নেই। আগের কিটের রেফারেন্স নাম্বারটাি আবার যুক্ত করলেই চলবে। সাথে এটাও জানিয়ে রাখি ইউকের ন্যাশনাল হেলথকেয়ার সার্ভিস তথা NHS থেকে ইমেইল করে (আগের ফর্মের কারণে) বারবার বলবে টেস্টের ফলাফল জমা দিতে। একক্ষেত্রে NHS-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে অথবা ইমেইলগুলোকে এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ যিনি যাত্রী, তিনি টেস্টতো তখনই করবেন যখন তিনি ইউকে আসবে। আর সেটা যেহেতু পিছিয়ে গিয়েছে, তাই টেস্টটা করতে হবে পরের প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম অনুযায়ী। যেহেতু একটা টেস্টের একটাই রেফারেন্স নাম্বার, সে কারণে সেটাকে একটা প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্মের সাথেই কেবল ব্যবহার করা যাবে। এজন্যে যাত্রীকে আলাদা ভাবে টেস্টের সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না।

এ লেখাটা যদি আপনার উপকারে আসে অথবা আপনি মনে করেন অন্য কারো কাজে লাগবে, তাহলে আপনার ফেইসবুকে অথবা বন্ধুর সাথে সরাসরি শেয়ার করতে অনুরোধ রইলো।

ইউকে এবং আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার এবং স্যাটেল হওয়া বিষয়ে সামনে আরো বিস্তারিত লেখার এবং আলোচনা করার ইচ্ছে রয়েছে। যারা UK/Ireland আসার জন্যে আবেদন করতে যাচ্ছেন, তারা অনুগ্রহ করে নিচের গুগল ফর্মটা পূরণ করে যোগাযোগে থাকুন। ইমেইলের মাধ্যমে পরবর্তী লেখা এবং ওয়েবিনার সম্পর্কে জানানো হবে নিয়মিত (যারা ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছেন, তাদের আবার নতুন করে শেয়ার করার প্রয়োজন নেই)।

এখানে ক্লিক করে নাম এবং ইমেইল শেয়ার করুন। (নতুন ট্যাবে লিঙ্ক খুলবে)

পোস্টটি মোট পড়া হয়েছে 2375 বার।

error: Content is protected !!