এনরোলমেন্টের অথবা UK আসার লাস্ট ডেট পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এখনও ভিসা পাই নি— কী করবো? কী হতে পারে ভবিষ্যতে?

শিরোনামে উল্লেখ করা পরিস্থিতিতে অনেকে রয়েছেন। প্রতিদিন প্রচুর ম্যাসেজ পাচ্ছি। কেউ কেউ আমার WhatsApp নাম্বার খুঁজে বের করে সেখানেও ম্যাসেজ পাঠাচ্ছেন সাহায্য চেয়ে। এরকম পরিস্থিতিতে আমার মনে হচ্ছে একটা পোস্ট লিখে সবাইকে পরামর্শ দেয়াই উত্তম কারণ আলাদা আলাদা ভাবে আমার পক্ষে সবার ম্যাসেজের উত্তর দেয়া অসম্ভব কারণ আমারও ব্যক্তিগত এবং প্রফেশনাল জীবন রয়েছে। সেখান থেকে সময় বের করা ভীষণ কঠিন এই মুহূর্তে। যাইহোক, শুরুতেই পরিস্থিতিটা একটু ব্যাখ্যা করি।

আপনারা অনেকে ভিসার জন্যে আবেদন করেছেন কিন্তু এনরোলমেন্টের অথবা UK তে আসার লাস্ট ডেট পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু ভিসা পান নি এখনও। এক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অনেকগুলো টাকার অংকও জড়িত। এই পোস্ট আপনাকে খুব বেশি আশা দিতে পারবে, এমনটা আমি দাবী করবো না। কিন্তু এতটুকু অন্তত বলবো যে এ রকম পরিস্থিতে আপনি শুধু একাই পড়েছেন, এমনা নয়। আপনার সাথে আরো অনেকে রয়েছেন এ সমস্যায় এবং গত সেপ্টেম্বরেরও এই সমস্যাটা ছিল। অর্থাৎ ভুক্তভোগী যারা, তারা শুধু এই ইনটেকেই নয়, আগের ইনটেকেও ছিল।

এবার আসছি সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে কথা বলতে। এক্ষেত্রে আমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে করে করণীয়গুলো বলবো আপনাদের।কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই জানাচ্ছি যারা এ পরিস্থিতিতে রয়েছেন, তারা বিশাল বিপদে আছেন। গত সেপ্টেম্বরের আমি একজনের মেন্টরিং করেছি যিনি ছাত্রী হিসেবে খুবই ভালো; ডাক্তার এবং পাবলিক হেলথে মাস্টার্স করতে ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছিলেন। তাকে অফার দিয়েছে দেরীতে, ক্যাস আরো দেরীতে। আমরা শেষ মুহূর্তে আবেদন করেছিলাম, সেটা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু যেহেতু অফার এবং ক্যাস দিয়েছে, আমরা ভিসার জন্যে আবেদন করি। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি ডেফার্ড মেইল পান এবং ভিসা হতে দেরী হচ্ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে তার এনরোলমেন্টের সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ভিসার তথ্য ছাড়া এনরোলমেন্ট শেষ করতে পারছিলাম না আমরা।সাথে সাথে আমরা কোর্স ডাইরেক্টরের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আশার কথা শোনাতে পারেন নি কিন্তু একটা ধারণা দেন যে আলোচনার মাধ্যমে সময় নষ্ট করতে থাকলে সমস্যার সমাধান হলেও হতে পারে। সরাসরি বলেন নি, কিন্তু ইংগিতে সেটাই বুঝিয়েছিলেন। আমরা এরপর রেজিস্ট্রিতে যোগাযোগ করি, সাউথ এশিয়ান ডিভিশনে যোগাযোগ করি এবং আমার পরিচিত একজনের মাধ্যমেও ইউনিভার্সিটির সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাই। স্টুডেন্টের এখানে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সকল ইমেইল সেই স্টুডেন্টই করেছেন। আমি ড্রাফ্ট দেখে দিয়েছি, কিন্তু লিখেছেন তিনিই। টেলিফোন করে কথা বলাও তিনিই করেছেন।

কিন্তু কিছুতেই সমাধান পাচ্ছিলাম না। অথচ অন্য আরেকজন স্টুডেন্ট যাকে আমি মেন্টরিং করছিলাম সেই সময়, তিনি কার্ডিফ মেট্রোপলিটনে গিয়েছেন। তারও একই সমস্যা ছিল। কিন্তু একটা ইমেইলেই সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। তার ক্ষেত্রে ভিসার আবেদন করার পরে UK তে আসার লাস্ট ডেট বদলে দিয়েছিল। কোন সমস্যা ছাড়াই তিনি ভিসা পেয়ে এবং UK এসে ক্লাসে যোগ দেন অনেক দেরীতে। অথচ ওয়েস্টমিনস্টারে আমরা কিছুই করতে পারছিলাম না।এদিকে UKVI তে পেইড মেইল করে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছিল। UKVI ও জানায় যে তারা যোগাযোগ করবে দ্রতই এবং আমরা যেন আর ইমেইল না করি। বুঝতে পারছিলাম যে ইন্টারভিউ নিবে যে কোন সময়।লাস্ট ডেট পার হয়ে যাবার পর আমরা অতিরিক্ত প্রায় দুই সপ্তাহ এভাবে বিভিন্ন জায়গায় মেইল করে এবং ব্যাক্তিগত লিঙ্কের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সময় নষ্ট করি। কেউই আমাদের সাহায্য করতে পারে নি কিম্বা করার চেষ্টা করে নি। এক সময় হঠাৎ ইউনিভার্সিটি আমাদের কিছু না জানিয়ে ক্যাস উইথড্রো করে নেয়। সাথে সাথে UKVI থেকে মেইল আসে যে যেহেতু স্টুডেন্টের ক্যাস নেই, তাই তারা ভিসা রিজেক্ট করেছে। এক্ষেত্রে স্টুডেন্ট এবং তার ডিপেন্ডেন্ট— দুইজনেরই ভিসা ফিস নষ্ট হয়। সাথে ইমিগ্রেশন হিস্ট্রিতে একটা রিজেকশন যুক্ত হয়। কিন্তু IHS ফিস ফেরত পায় তারা।ইউনিভার্সিটি তাকে দুইটা অফার দেয়। সেপ্টেম্বরের ডেফার করানো অথবা রিফান্ড চাওয়া। আমরা চেয়েছিলাম কোর্স বদলে জানুয়ারিতে নিতে। পাশাপাশি ২ হাজার পাউন্ড স্কলারশিপ যা অন্তত ভিসা ফিসের জন্যে কম্পেনসেশন হতো। কিন্তু ততদিনে সেটাও দেরী হয়ে গিয়েছে। ২ হাজার পাউন্ড পেয়েছিলাম, কিন্তু জানুয়ারিতে পাই নি। সেই সেপ্টেম্বরেই শুরু করতে হতো। সে কারণে স্টুডেন্ট রিফান্ডের জন্যে আবেদন করেন ডিসেম্বরে যা এখনও আসে নি। সাধারণত ৬ সপ্তাহ সময় লাগে রিফান্ড আসতে। মাঝে ক্রিস্টমাসের বন্ধ ছিল। আশা করছি রিফান্ড আসবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি।এ গল্প কেন শোনালাম? কারণ সম্ভাব্য কী কী ঘটতে পারে অন্যদের সাথে তার সবই এ গল্পে রয়েছে। যদি সারসংক্ষেপ করি তাহলে এটা দাঁড়ায়—

১. ইউনিভার্সিটি ক্যাস উইথড্রো করতে পারে। এ কারণে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখাটা খুবই জরুরী। উপরের উদাহরণে যেটা জেনেছি, ডেট পার হয়ে গেলেই তারা ক্যাস উইথড্রো করে না। একটু সময় দেয়। সেই সমযটা তাদের সাথে কথা বলে বলে ‘কিনতে’ হবে। এক্ষেত্রে স্টুডেন্টকে খুব ভালো একটা ভূমিকা রাখত হবে। আমি যার উদাহরণ দিলাম, তিনি খুবই তৎপর ছিলেন যোগাযোগের ক্ষেত্রে। আর একটু সুযোগ পেলেই হয়তো তার ভিসাও হয়ে যেতো। যদিও তিনি সফল হন নি, কিন্তু এটা অন্তত দেখিয়েছেন এরকম পরিস্থিতিতে কী করে মোকাবেলা করতে হয়।

২. ভিসা রিজেক্ট হবে যদি ক্যাস উইথড্রো করে নেয়। মানসিক ভাবে সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো।

৩. ভিসা রিজেক্ট হলে আমি মনে করি সুযোগ থাকলে সেপ্টেম্বর ইনটেকে যাওয়া ভালো। সেক্ষেত্রে রিফান্ডের ঝামেলা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে একটু চাপ দিয়ে একটা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় কিনা, সেটা দেখুন। তাহলে অন্তত ভিসা ফিসের লসটা উঠে আসবে।

৪. IHS ফিস অটোমেটিক কার্ডে রিফান্ড হবে। এর জন্যে আলাদা করে আবেদন করার দরকার নেই।

৫. অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে খুবই লিবারেল। যেমন, কার্ডিফ মেন্ট্রোপলিটন। তাই আগেই হতাশ না হয়ে ইউনিভার্সিটিকে কনভিন্স করার চেষ্টা করুন। যদি তারা কনভিন্সড হয়, সাথে সাথে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

৬. আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি অনেকেই হবেন। মানসিক চাপ তো আছেই সাথে। কিন্তু এটাও মনে রাখবেন যে UK তে পড়তে আসতে না পারা জীবনের শেষ নয়। এমন কি ভবিষ্যতেও হয়তো আবার আসতে পারবেন। সে কারণে হতাশ না হয়ে বাস্তবতার নিরিখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।

যারা ভবিষ্যতে আবেদন করছেন, তাদের কাছে অনুরোধ— অন্তত জুন মাসের মধ্যে আবেদন করবেন। আরো ভালো যদি এপ্রিল/মের মধ্যে করতে পারেন। গত এক বছর মেন্টরশিপ প্রোগ্রামটা চালানোর কারণ আমরা দেখেছি যারা আগে আগে আবেদন করেন, তারা কত সহজে এবং ঝামেলাহীন ভাবে UK চলে আসেন পড়তে। আর যারা দেরী করে শেষ মুহূর্তে আবেদন করতে আসেন, তারা একের পর এক সমস্যার মুখোমুখি হতে থাকেন। এমন নয় যে তারা আসতে পারেন না। সিংহভাগই পারেন। কিন্তু যারা পারেন না, তাদের এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় নিয়মিত।

লেখাটা শেষ করবো আরেকটা মেন্টরিং এর গল্প বলে। আশার গল্প বলে। আমি একজন আন্ডারগ্র্যাড স্টুডেন্টকে মেন্টরিং করেছি যিনি আগামী পরশু ফ্লাই করবেন— শেফিল্ড হ্যালামে যাচ্ছেন। তার UK তে ঢোকার শেষ তারিখ ৩১ জানুয়ারি। এনরোলমেন্টের শেষ তারিখ ছিল ১৬ জানুয়ারি। প্রায় একই রকম পরিস্থিতিতে এই স্টুডেন্টও পড়তে যাচ্ছিল। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা এবং স্টুডেন্টের তৎপরতায় আমরা সেটা মোকাবেলা করি। এনরোলমেন্ট কিছুতেই করা যাচ্ছিল না। ১৬ জানুয়ারি একদম শেষ মুহূর্তে এনরোলমেন্ট করেছি (তার আগে অনেক যোগাযোগ, ব্যক্তিগত ভাবে ইউনিভার্সিটির সাথে কথা বলা ইত্যাদি ইত্যাদি তো ছিলই) এবং আকাশ ছোঁয়া টিকেটের দাম থাকায় ভিসা পাবার পরও অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিল আসাটা। শেষ পর্যন্ত ২৭ তারিখের টিকেট পেয়ে সব কিছু নিয়মের মধ্যে থেকে আমরা শেষ করতে পেরেছি। আপনারা যারা বর্তমান পরিস্থিতিতে রয়েছেন, তারাও হয়তো এভাবে চলে আসবেন। এখনই আশা হারাবেন না। কিন্তু খারাপ পরিস্থিতির জন্যেও প্রস্তুত থাকবেন যাতে (আল্লাহ না করুন) ওরকম কিছু ঘটলে মোকাবেলা করতে পারেন।

সকলকে শুভ কামনা এবং দোয়া।

পুনশ্চ: মেন্টরিং অথবা মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানতে চাইলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে বিস্তারিত দেখুন। এ বছর মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে অনেক পরিবর্তন আসবে এবং আরো প্রফেশনাল করা হবে। এ বিষয়ে ফেব্রুয়ারিতে বিস্তারিত জানানো হবে।

মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম (নতুন ট্যাবে ওপেন হবে)

লেখাটা পড়া হয়েছে 1803 বার।

error: Content is protected !!